Saturday, January 1, 2011

LOVE, LOVE

ভালবাসি, ভালবাসি
ছোট গল্প
মণিদীপা ভট্টাচার্জ
১/১/১১
===============
কাল সারা রাত্তির পার্টি টে নাচানাচি করে পায়ে খুব ব্যাথা আজ নীরার।
রানা কথাটা মানে না। লিখল, ‘বুড়ো বয়েসে আর কত?’
নীরা ও তক্ক করার জন্য লিখল, ‘মোটেও না, নেহাত অল্প বয়েসে ছে লে পিলে হয়ে গেছে, আর তা
ছাড়া এ দেশে কেউ বুড়ো হয় না।।‘
অমনি রানার জবাব, ‘এ দেশ ও দেশ সব দেশেই বয়েস বাড়ে। জোর করে সময় টাকে ধরে রাখার চেষ্টা!!’
সত্যি যদি সময় টাকে ধরে রাখতাম, তাহলে তুমি কি করতে রানা চ্যাটার্জি ?
কথা টা লিখেও মুছে দিল ফেসবুক এর chat এর window থেকে।
‘রাত তিনটের সময় আবার কম্পিউটার নিয়ে বসলে?’ ঘুমাতে যাবার আগে সুমিত উঁকি মারল study room এ।
‘এই যাচ্ছি , তুমি ঘুমাতে যাও । আমি মিনিট দশেকের ভেতরেই চলে আসছি ।‘ নীরা বর কাছে এসে , গাল টা আলতো ছুঁয়ে বল্ল।
‘কাল আবার বস এর বাড়ি পার্টি , মনে আছে তো ? একটু আগে গিয়ে হেল্প করতে হবে বলেছে । Anyway, Good Night ।‘ বলেই সুমিত শুতে ছলে গেল।
আমার যে আর পার্টি টে যেতে ভাল লাগে না সুমিত। আমরা কি একা বসে একটু গল্প করতে পারি না ?
‘কি হল, পালালে না কি?’ ওপাশে রানা র প্রশ্ন ।
নীরা টাইপ করল, ‘নিউ ইয়ার এ বুড়ি বানিয়ে দিলে, যাও, কথাই বলব না তোমার সাথে ।‘
রানা লিখল, ‘যাক , বাঁচা গেছে ।‘
‘মানে? Excuse me, Facebook এ friend’s request টা, কে পাঠিয়েছিল যেন?’
‘আমি কি করে জানব তুমি শেই আগের মতই থাকবে?’ রানা লিখে জানাল।
নীরা আরও রেগে লিখল,’তার মানে?’
‘মানে, সেই রকম ই ঝগড়ুটে।।‘ রানা আরও রাগাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নীরা কে।
‘আর কি রকম শুনি?’
‘আগের মতই, একটু মিষ্টি মিষ্টি, টক ঝাল আর নোনতা নোনতা।‘
‘খুব হয়েছে, আমি গেলাম ঘুমাতে। অনেক রাত হল।‘ নীরা লিখল।
‘কাজের মদ্ধে দুই, খাই আর শুই ? কুম্ভকর্ণ ই রয়ে গেছ তার মানে ।‘
‘বাবু মশায়, এখন রাত সাড়ে তিন টে প্রায়। তোমার তো আর কি, দুপুরে অফিস এর কাজ ফাঁকি দিয়ে chat করছ।‘ - নীরা রানার জবাবে লিখল।
‘ফাঁকি? আমি এই মুহূর্তে এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ এ বসে তোমার বকবকানি শুনছি।‘
‘বললাম তো শুনতে হবে না। যাও প্রেমিকা বা বউ কে জ্বালাও গে।‘ নীরা হাই তুলতে তুলতে লিখল। জানে এর পর কথপকথন বেশি দূর এগবে না।
রানা বল্ল, ‘আবার প্রেমিকা কোথা থেকে পেলে?প্রেম ত্রেম আমার আশে না। আমি খুব practical লোক।‘
‘তাই নাকি?’ নীরা লিখল,’ তাই জন্য ই আমার জন্য খুঁজে খুঁজে সেই সাঁওতাল পরগনা না কোথায় গিয়ে নীল পাথরের দুল কিনে এনেছিলে?’
‘সে.. আমি.. ও দিকে গেছিলাম, চোখে পড়ল, তাই ‘ রানা র উত্তর ।
নীরা অমনি লিখল, ‘কারন টা আমি বলি?কারন, আমি বলেছিলাম আমার নীল শাড়ী টার সাথে পরার জন্য নীল কানের দুল নেই কোনও।‘
‘যাও যাও, রাত হল অনেক, ঘুমাতে যাও। বাজে বকো খালি।‘ রানা লিখল।
‘আচ্ছা রানা, তুমি কি আমায় ভালবাসতে ?’ নীরা হেঁয়ালি প্রশ্ন করল।
‘বললাম যে ও সব আমার আসে না।‘ রানা এড়িয়ে গেল ।
‘তবে আমার জন্য কেন বসে থাকতে সেই রামদার চা এর দোকানে? ঠিক পাঁচ টা দশ এ? ’
‘চা এর দোকানে লোকে কেন বসে নীলা? চা খেতেই যায় বোধহয়, তাই না?’
‘তুমি জানতে ঐ সময় আমি অফিস থেকে বাড়ি ফিরব তাই।‘
রানা হাসল, ‘হা হা। তোমার মাথা, কল্পনা তোমার ।‘
‘আর আমাকে নীলা বলে ই বা ডাকতে কেন তুমি? ‘
‘নীলা, নীরা এক ই হল, র এর পরেই ল, গুলিয়ে যেত।
‘তুমি আমাকে নিয়ে কবিতা লিখতে কেন তবে? নীলা কে ছিল কবিতায়?’
‘কি মুশকিল, কবিতা ও লিখতে পারব না নিজের মত করে?’ রানা রাগ দেখাল।
‘তাহলে, সেই কবিতাটা ছিঁড়ে ফেলেছিলে কেন রানা?’
‘কোন কবিতা?আমার মনে নেই।‘ রানা লিখল।
‘মনে আছে তোমার, আমি জানি। তুমি ভেবেছিলে কবিতা টা আমার ভাল লাগে নি। তাই।‘
‘উফ, এত বাজে বকো না তুমি, কান ঝালাপালা করে দাও,’ রানা , নীরার কথায় লিখল।
‘এই কুড়ি বছরে, এক বারের জন্য ও ভালবাসার কথা টা জানাতে পারলে না তো, রানা ?’
‘Oh, Come on! ভালবাসি, ভালবাসি, ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলার ব্যাপার না।‘
‘এক বার তো বলা ই যেত !’ নীরা বল্ল !
‘ভালবাসা টা অনুভব করার জিনিষ। বলার দরকার পরে না।‘
‘দরকার পরে রানা, অনেক কিছু পালটে দেয়, এই চারটে অক্ষর’। নীরা কথাটা লিখবে ভেবেও লিখল না রানা কে।
তার বদলে নীরা টাইপ করল,’ চল, এবার শুতে গেলাম, অনেক রাত্তির হল।‘
কম্পিউটার ছেড়ে নীরা বারান্দায় গিয়ে বসল ।
সুমিত ঘরে ঘুমাচ্ছে। নীরা র ঘুম আসছে না।
রানার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে।
রানা তো এয়ারপোর্ট এই আছে বসে, আর একটু কথা বলা ই যেতে পারে।

না থাক, নীরা ভাবল । এক কাপ চা বানাতে রান্না ঘরে ঢুকল ।
শব্দেতে ঘুম ভেঙ্গে গেছে বোধহয় সুমিত এর ।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে সুমিত ওকে জড়িয়ে ধরল।
বল্ল, ’এখন ও জেগে কেন? চল শোবে চল।‘
কোনও ক্রমে ওর বাঁধন মুক্ত হয়ে নীরা বল্ল, ’ এস না একটু বসে আড্ডা মারি।‘
সুমিত আঁতকে উঠে বল্ল, ’ আড্ডা ? এই রাত দুপুরে ? পাগল না মাথা খারাপ ?’
‘সকাল তো হয়েই গেছে। আজ তো 1st জানুয়ারী । বস না একটু ।‘ নীরা একটু জোর করল সুমিত কে।
‘তুমি কর গল্প বাবা তোমার boyfriend এর সাথে । আমি চললাম ঘুমোতে।‘
‘তুমি কি আমার boyfriend না?’ নীরা প্রশ্ন করল।
‘আমি তো পাথরের নীল কানের দুল খুঁজে আনতে পারব না সাঁওতাল পরগনা ঘুরে।‘ , সুমিত মিচকি হেসে বেড রুম এর দিকে পা বাড়াল।
‘মানে? তুমি আমার ...’ নীরা রেগে উঠে কথা টা ও শেষ করতে পারল না।
বেডরুম এর বন্ধ দরজার আওয়াজ টা শুনে, নীরা চা এর কাপ এ চুমুক দিল।
…..copyright@Manidipa

No comments:

Post a Comment